Posts

Showing posts from May, 2025

অনধিকার চর্চা: কষ্ট বাড়ানোর ফাঁদ

 অনধিকার চর্চা: কষ্ট বাড়ানোর ফাঁদ মোঃ শাহাদৎ হোসেন জীবনে চলার পথে আমরা প্রায়ই এমন কিছু কাজ করি, যেগুলো আমাদের দায়িত্ব বা অধিকার নয়—তবুও আমরা সেগুলোর মধ্যে জড়িয়ে পড়ি। ফলাফল? শুধু নিজেরই অশান্তি আর ভোগান্তি বাড়ে। এই বিষয়টিই আমরা বলি “অনধিকার চর্চা”—অর্থাৎ, যেটা নিজের কাজ নয়, তাতে অযথা মাথা ঘামানো। আমরা যখন অন্যের বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত আগ্রহ বা দৃষ্টি নিবদ্ধ করি, তখন তা প্রাথমিকভাবে নিরীহ কৌতূহল মনে হলেও ধীরে ধীরে তা পরিণত হয় এক ধরনের মানসিক ও সামাজিক জটিলতায়। কে কী করছে, কে কার সাথে গেল, কার কত আয়—এই সব কিছুতে অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়া একদিকে যেমন নিজের সময় ও মানসিক শক্তির অপচয়, অন্যদিকে সামাজিক সম্পর্কেও দূরত্ব তৈরি করে। আমার শিক্ষকতা জীবনে বহুবার লক্ষ্য করেছি—ছাত্রছাত্রীরা অন্যের নম্বর বা ফলাফল নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তিত হয়ে পড়ে, অথচ নিজের প্রস্তুতি যথাযথভাবে নেয় না। একইভাবে কর্মক্ষেত্রেও দেখা যায়—কে বসের সাথে বেশি কথা বললো, কে কোন প্রশংসা পেল—এসব নিয়ে চিন্তায় পড়ে অনেকেই নিজের কাজ ভুলে যায়। অথচ, এসব ভাবনা আসলে নিজের কষ্ট বাড়ানো ছাড়া কিছু নয়। আমরা যদি বুঝতে পারি যে প্রতিটি মানুষ আলাদা, প্রত্যেক...
 পৃথিবীতে আসা যাওয়ার পালা, কেউ চিরদিন থাকবে না – মোঃ শাহাদৎ হোসেন পৃথিবীতে আমাদের আগমন একটি সফরের সূচনা, আর বিদায় একটি অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। সময় যেন এক অবিরাম নদীর মতো—কারও জন্য থেমে থাকে না। আমরা সবাই এই ধরণীতে এসেছি কিছু সময়ের জন্য, অতিথির মতো, নির্ধারিত এক সফরের যাত্রী হয়ে। একটি কচি পাতা যখন গাছে জন্ম নেয়, তখন তা যেন সতেজ জীবনের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই পাতাই একদিন হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে মাটিতে। একটি কচি ডাটাও এক সময় শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়। এসব প্রাকৃতিক চক্র আমাদের জীবনকে স্মরণ করিয়ে দেয়—সব কিছুরই একটি শুরু আছে, আবার শেষও আছে। মানুষও শিশু থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছায়। এ যাত্রাপথে তার অভিজ্ঞতা বাড়ে, জীবন ঘন হয়, কিন্তু সময় থেমে থাকে না। একজন মানুষ যেমন তার শৈশব, কৈশোর, যৌবন ও বার্ধক্য অতিক্রম করে, তেমনি একদিন এই জীবনযাত্রাও থেমে যায়। আমরা যেন পৃথিবীতে একটি ছোট সফরে এসেছি—কিছু দায়িত্ব পালন করতে, কিছু ভালোবাসা বিলাতে, কিছু স্মৃতি রেখে যেতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদেরও বিদায় নিতে হয়। এই বাস্তবতাই মানুষকে বিনম্র করে, দায়িত্বশীল করে এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে গুরুত্ব...

মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ক্ষমা করতে হবে ।

 মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ক্ষমা করতে হবে। মো: শাহাদত হোসেন। ক্ষমা—শুধু একটি শব্দ নয়, এটি একটি মানসিক মুক্তির চাবিকাঠি। আমাদের জীবনে অনেকেই আমাদের কষ্ট দেয়, অবিচার করে, ভুল বোঝে কিংবা খারাপ ব্যবহার করে। এসব ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আমরা রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা জমিয়ে রাখি; কিন্তু প্রশ্ন হলো, এতে কি আমরা কিছুই লাভ করি? বরং নিজেই নিজের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠি। মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হলে আমাদের সবচেয়ে আগে যেটা শিখতে হবে, তা হলো—ক্ষমা করা। ছোটখাটো বিষয় থেকে শুরু করে বড় বড় আঘাত—যা-ই হোক না কেন, যদি আমরা তা ক্ষমা করতে পারি, তবে আমাদের হৃদয় অনেক হালকা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সহজে ক্ষমা করতে পারে, তাদের রক্তচাপ কম থাকে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমে, এবং মানসিক চাপ অনেকটাই হ্রাস পায়। রাগ, ক্ষোভ আর প্রতিশোধের চিন্তা আমাদের শরীরে করটিসল নামক স্ট্রেস হরমোন বাড়িয়ে তোলে। দীর্ঘমেয়াদে এটি আমাদের দেহ ও মনের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে—ঘুমের সমস্যা, মনঃক্ষুণ্ণতা, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ এর মধ্যে অন্যতম। অন্যদিকে, ক্ষমা করার মাধ্যমে মন প্রশান্ত হয়, হার্ট ভাল থাকে এবং কষ্ট অনেকটাই কমে যায়। ধরুন কেউ আপনার সঙ্গে অন্যায় করেছে—...

পথের শেষে বিনোদন নয়, পথেই বিনোদন

 পথের শেষে বিনোদন নয়, পথেই বিনোদন আমরা অনেকেই ভাবি, কঠিন পথ পেরিয়ে শেষ গন্তব্যে পৌঁছালেই মিলবে শান্তি, সুখ আর বিনোদন। কিন্তু যদি সেই পথটাই হয় ক্লান্তিকর, কষ্টের, বিষাদময়—তবে কি শেষের সেই বিনোদন সত্যিই উপভোগ্য হবে? আমার অভিজ্ঞতায় আমি বুঝেছি, পথটা যদি সুন্দর না হয়, যদি চলার সময় মন না হাসে, তবে শেষে পৌঁছেও মনের ক্লান্তি কাটে না। ঠিক যেমন একটা দীর্ঘ ভ্রমণে যদি শুধু গন্তব্যের কথা ভেবে হাঁটতে থাকি, তাহলে পথের সৌন্দর্য, পাখির ডাক, মানুষের হাসি—সবই মিস করে ফেলি। জীবন একটানা কাজ, সংগ্রাম আর স্বপ্নপূরণের নাম। আমরা প্রায়ই ভাবি, “এই কাজটা শেষ হোক, তারপর আরাম করব। বিনোদন করব।” কিন্তু কাজ শেষ হবে তো? একটার পর একটা কাজ, দায়িত্ব, স্বপ্নের পেছনে ছুটে চলা তো চলতেই থাকবে। তাই আমি বলি, কাজের মাঝেই খুঁজে নিতে হবে আনন্দ। একটু থেমে সহকর্মীর সাথে হেসে নেওয়া, নিজের ছোট সাফল্য উদযাপন করা, কাজের মাঝে একটা পছন্দের গান শোনা—এভাবেই তো পথটাই আনন্দময় হয়। শুধু গন্তব্য নয়, চলার প্রতিটা ধাপেই যদি আনন্দ থাকে, তবে জীবন অনেক সহজ হয়ে যায়। বিনোদন তখন আর আলাদা করে সময় নেওয়া কিছু নয়—তা হয় চলার অংশ, শ্বাস নেওয়ার মতোই সহজ, ...

প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের মানবিক আর নৈতিক করে গড়ে তুলতে পারেনি ।

 প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের মানবিক আর নৈতিক করে গড়ে তুলতে পারেনি ✍ মোঃ শাহাদৎ হোসেন আজকের সমাজে যখনই চারপাশে তাকাই, দেখি শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে নৈতিক অবক্ষয়ের হারও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এই প্রশ্নটি বারবার সামনে আসে—আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা কি সত্যিই আমাদের মানুষ করে তুলতে পেরেছে? 📌 শিক্ষার উদ্দেশ্য ছিল কী? একটি আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল—জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব গঠন, মূল্যবোধ শেখানো, মানবিক হওয়া এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল নাগরিক গড়ে তোলা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের পাঠ্যক্রম শুধুমাত্র পরীক্ষা নির্ভর, চাকরি পাওয়ার উপযোগী কিছু তথ্য মুখস্থ করার প্রতিযোগিতায় সীমাবদ্ধ। সেখানে মানবিকতা, সততা, সহানুভূতি, সহনশীলতা—এই মৌলিক মানবীয় গুণাবলির চর্চা আজ প্রায় অনুপস্থিত। ⚠️ নৈতিক শিক্ষা পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ আমাদের শিক্ষার্থীরা ‘নৈতিক শিক্ষা’ নামক একটি বিষয় হয়তো পড়ে, কিন্তু সেটি বাস্তব জীবনে প্রয়োগের কোনো সুযোগ কিংবা দিকনির্দেশনা পায় না। ক্লাসে শেখানো হয় “সততা সর্বোত্তম নীতি” কিন্তু সে যখন রাস্তায় ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না দ...

সর্বদা নতুন জ্ঞান অর্জন করতে সচেষ্ট থাকুন

 সর্বদা নতুন জ্ঞান অর্জন করতে সচেষ্ট থাকুন – মোঃ শাহাদৎ হোসেন জ্ঞান এমন এক ধন, যা ভাগ করলে কমে না, বরং বাড়ে। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হচ্ছে জ্ঞান। একবিংশ শতাব্দীর এই যুগে যেখানে প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতিনিয়ত রূপান্তর ঘটছে, সেখানে আমরা যদি স্থবির হয়ে যাই, তবে পিছিয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। তাই আমি বিশ্বাস করি—জ্ঞান অর্জনের যাত্রা কখনোই শেষ হওয়া উচিত নয়। আমার শিক্ষকতা জীবনে আমি হাজারো শিক্ষার্থীর চোখে দেখেছি কৌতূহল, প্রশ্ন, এবং জানার আগ্রহ। তাদের প্রতিটি প্রশ্ন আমাকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। এইভাবেই আমি উপলব্ধি করেছি—জ্ঞান শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়, তা লুকিয়ে থাকে আমাদের চারপাশের প্রতিটি অভিজ্ঞতায়, প্রতিটি মানুষে, প্রতিটি সমস্যার সমাধানে। নতুন কোনো বিষয় শিখতে গেলে অনেক সময় আমরা ভয় পাই। মনে হয়, “এটা আমার পক্ষে সম্ভব না” কিংবা “আমি তো এই বিষয়ে জানি না।” কিন্তু আমি সবসময় বলি—শেখার কোনো বয়স নেই, কোনো বাধা নেই, যদি আপনার মনে থাকে জানার আগ্রহ আর চেষ্টা করার ইচ্ছা। আমি যখন পদার্থবিদ্যার মতো কঠিন একটি বিষয়ে গবেষণায় যুক্ত হই, তখন...