মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ক্ষমা করতে হবে ।
মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ক্ষমা করতে হবে।
মো: শাহাদত হোসেন।
ক্ষমা—শুধু একটি শব্দ নয়, এটি একটি মানসিক মুক্তির চাবিকাঠি। আমাদের জীবনে অনেকেই আমাদের কষ্ট দেয়, অবিচার করে, ভুল বোঝে কিংবা খারাপ ব্যবহার করে। এসব ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আমরা রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা জমিয়ে রাখি; কিন্তু প্রশ্ন হলো, এতে কি আমরা কিছুই লাভ করি? বরং নিজেই নিজের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠি।
মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হলে আমাদের সবচেয়ে আগে যেটা শিখতে হবে, তা হলো—ক্ষমা করা। ছোটখাটো বিষয় থেকে শুরু করে বড় বড় আঘাত—যা-ই হোক না কেন, যদি আমরা তা ক্ষমা করতে পারি, তবে আমাদের হৃদয় অনেক হালকা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সহজে ক্ষমা করতে পারে, তাদের রক্তচাপ কম থাকে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমে, এবং মানসিক চাপ অনেকটাই হ্রাস পায়।
রাগ, ক্ষোভ আর প্রতিশোধের চিন্তা আমাদের শরীরে করটিসল নামক স্ট্রেস হরমোন বাড়িয়ে তোলে। দীর্ঘমেয়াদে এটি আমাদের দেহ ও মনের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে—ঘুমের সমস্যা, মনঃক্ষুণ্ণতা, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ এর মধ্যে অন্যতম। অন্যদিকে, ক্ষমা করার মাধ্যমে মন প্রশান্ত হয়, হার্ট ভাল থাকে এবং কষ্ট অনেকটাই কমে যায়।
ধরুন কেউ আপনার সঙ্গে অন্যায় করেছে—আপনাকে অবহেলা করেছে বা কটূ কথা বলেছে। এখন আপনি যদি সেই রাগ মনে পুষে রাখেন, তাহলে প্রতিদিন সেই রাগ, কষ্ট আর হতাশা আপনার মধ্যে পুঞ্জীভূত হবে। আপনি হয়তো ভাবছেন, “কেন আমি ক্ষমা করব, অন্যায় তো সে করেছে!” কিন্তু আপনি যদি একটু ভেবে দেখেন, সেই ব্যক্তি তো তার কাজের ফল একদিন না একদিন ভোগ করবেই। আপনি যদি অহেতুক তার প্রতি রাগ পুষে রাখেন, আপনি নিজেই কষ্ট পাবেন। তার কোনো ক্ষতি হবে না, বরং আপনি নিজের মানসিক শান্তি হারাবেন।
ক্ষমা করা মানে কোনো অন্যায়ের প্রশ্রয় দেওয়া নয়। বরং এটা নিজেকে কষ্টের আবরণ থেকে মুক্ত করার একটি উপায়। আপনার প্রতি যে অবিচার করেছে, তার বিচার নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা করবেন; কিন্তু আপনি যদি ক্ষমা করতে পারেন, তবে আপনি নিজের হৃদয়কে সুস্থ রাখবেন।
সুতরাং, নিজের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য, জীবনের প্রশান্তি ও সাফল্যের জন্য—ক্ষমা করুন। মুক্ত হোন। কারণ রাগ পুষে রাখা মানে নিজের হৃদয়ে আগুন জ্বালিয়ে রাখা, যা একসময় আপনাকেই পোড়াবে।
শেষ কথা:
ক্ষমা একটি শক্তি, দুর্বলতা নয়। যারা ক্ষমা করতে পারে, তারাই মানসিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী। আপনি যদি সত্যিই সুখী ও সুস্থ জীবন পেতে চান, তবে আজ থেকেই শুরু করুন—ক্ষমা করতে শিখুন।
Comments
Post a Comment