প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের মানবিক আর নৈতিক করে গড়ে তুলতে পারেনি ।
প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের মানবিক আর নৈতিক করে গড়ে তুলতে পারেনি
✍ মোঃ শাহাদৎ হোসেন
আজকের সমাজে যখনই চারপাশে তাকাই, দেখি শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে নৈতিক অবক্ষয়ের হারও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এই প্রশ্নটি বারবার সামনে আসে—আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা কি সত্যিই আমাদের মানুষ করে তুলতে পেরেছে?
📌 শিক্ষার উদ্দেশ্য ছিল কী?
একটি আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল—জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব গঠন, মূল্যবোধ শেখানো, মানবিক হওয়া এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল নাগরিক গড়ে তোলা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের পাঠ্যক্রম শুধুমাত্র পরীক্ষা নির্ভর, চাকরি পাওয়ার উপযোগী কিছু তথ্য মুখস্থ করার প্রতিযোগিতায় সীমাবদ্ধ। সেখানে মানবিকতা, সততা, সহানুভূতি, সহনশীলতা—এই মৌলিক মানবীয় গুণাবলির চর্চা আজ প্রায় অনুপস্থিত।
⚠️ নৈতিক শিক্ষা পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ
আমাদের শিক্ষার্থীরা ‘নৈতিক শিক্ষা’ নামক একটি বিষয় হয়তো পড়ে, কিন্তু সেটি বাস্তব জীবনে প্রয়োগের কোনো সুযোগ কিংবা দিকনির্দেশনা পায় না। ক্লাসে শেখানো হয় “সততা সর্বোত্তম নীতি” কিন্তু সে যখন রাস্তায় ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না দেখে, তখন বাস্তবতার সাথে পাঠ্যবইয়ের পার্থক্য তাকে বিভ্রান্ত করে। ফলে শিক্ষিত হলেও সে নৈতিকতাবর্জিত হয়ে ওঠে।
💼 কর্মজীবনের দুর্নীতি: শিক্ষার প্রতিফলন?
আমাদের সমাজে আজ যে দুর্নীতি, অনিয়ম, সুবিধাবাদিতা, এবং দায়িত্বে অবহেলা দেখা যায়, তা অনেকাংশেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি ব্যর্থতা। কারণ, শিক্ষা যদি সত্যিকারের মানুষ না বানাতে পারে, তবে সেটা কেবল একটি সার্টিফিকেট-দানকারী যন্ত্র হয়ে থাকে। একজন ডাক্তার যদি রোগীকে ঠিকভাবে চিকিৎসা না করে কেবল টাকা কামানোর মাধ্যম হিসেবে পেশাকে দেখে, একজন শিক্ষক যদি অর্থের বিনিময়ে নকল বা পাশ করিয়ে দেয়, একজন কর্মকর্তা যদি ফাইল নাড়াতে ঘুষ দাবি করে—তবে এরা কি প্রকৃত অর্থে শিক্ষিত?
🛠️ সমাধান কোথায়?
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রয়োজন গভীর পরিবর্তনের।
১. নৈতিক ও মানবিক শিক্ষার বাস্তবচর্চা: পাঠ্যপুস্তকের বাইরে গিয়ে জীবনঘনিষ্ঠ অভিজ্ঞতা, চরিত্র গঠনমূলক গল্প, নাটক, বিতর্কের মাধ্যমে মূল্যবোধ গড়ে তোলা।
২. শিক্ষক প্রশিক্ষণ: শিক্ষকদের হতে হবে নৈতিকতার আদর্শ। শিক্ষক নিজে অনৈতিক হলে, তার দ্বারা ছাত্র কখনো নৈতিক হতে পারে না।
৩. পরীক্ষা নির্ভরতা কমিয়ে জীবনের জন্য শিক্ষা: মুখস্থবিদ্যা নয়, জীবনমুখী দক্ষতা, সমস্যা সমাধান, এবং দায়িত্ববোধ শেখাতে হবে।
৪. পরিবার-বিদ্যালয় সমাজের সমন্বয়: শুধু বিদ্যালয়ের দায়িত্ব নয়, পরিবার ও সমাজকেও শিক্ষার অংশীদার হতে হবে।
✨ শেষ কথা
শিক্ষার মাধ্যমে যদি একজন মানুষ তার বিবেক জাগ্রত না করতে পারে, অন্যের কষ্ট বুঝতে না পারে, সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে না শেখে—তবে সে যত বড় ডিগ্রি-ধারী হোক, সমাজের বোঝা হয়েই থেকে যাবে। তাই শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক রূপান্তর এখন সময়ের দাবি। নৈতিক মানুষ ছাড়া একটি উন্নত দেশ কখনো গড়ে উঠতে পারে না।
Comments
Post a Comment