অনধিকার চর্চা: কষ্ট বাড়ানোর ফাঁদ
অনধিকার চর্চা: কষ্ট বাড়ানোর ফাঁদ
মোঃ শাহাদৎ হোসেন
জীবনে চলার পথে আমরা প্রায়ই এমন কিছু কাজ করি, যেগুলো আমাদের দায়িত্ব বা অধিকার নয়—তবুও আমরা সেগুলোর মধ্যে জড়িয়ে পড়ি। ফলাফল? শুধু নিজেরই অশান্তি আর ভোগান্তি বাড়ে। এই বিষয়টিই আমরা বলি “অনধিকার চর্চা”—অর্থাৎ, যেটা নিজের কাজ নয়, তাতে অযথা মাথা ঘামানো।
আমরা যখন অন্যের বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত আগ্রহ বা দৃষ্টি নিবদ্ধ করি, তখন তা প্রাথমিকভাবে নিরীহ কৌতূহল মনে হলেও ধীরে ধীরে তা পরিণত হয় এক ধরনের মানসিক ও সামাজিক জটিলতায়। কে কী করছে, কে কার সাথে গেল, কার কত আয়—এই সব কিছুতে অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়া একদিকে যেমন নিজের সময় ও মানসিক শক্তির অপচয়, অন্যদিকে সামাজিক সম্পর্কেও দূরত্ব তৈরি করে।
আমার শিক্ষকতা জীবনে বহুবার লক্ষ্য করেছি—ছাত্রছাত্রীরা অন্যের নম্বর বা ফলাফল নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তিত হয়ে পড়ে, অথচ নিজের প্রস্তুতি যথাযথভাবে নেয় না। একইভাবে কর্মক্ষেত্রেও দেখা যায়—কে বসের সাথে বেশি কথা বললো, কে কোন প্রশংসা পেল—এসব নিয়ে চিন্তায় পড়ে অনেকেই নিজের কাজ ভুলে যায়। অথচ, এসব ভাবনা আসলে নিজের কষ্ট বাড়ানো ছাড়া কিছু নয়।
আমরা যদি বুঝতে পারি যে প্রতিটি মানুষ আলাদা, প্রত্যেকের জীবনযাত্রা ও অভিজ্ঞতা ভিন্ন—তাহলে অন্যের বিষয় নিয়ে অপ্রয়োজনীয় চিন্তা করাটাই হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়। জীবন অনেক ছোট, কিন্তু সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য প্রয়োজন নিজের কাজ এবং দায়িত্বের প্রতি মনোযোগ।
কীভাবে অনধিকার চর্চা থেকে বিরত থাকবো?
১. নিজের সময়ের মূল্য দেই – সময় নষ্ট না করে ব্যক্তিগত উন্নয়ন, শিক্ষা বা সৃজনশীল কাজে ব্যয় করুন।
২. নিজের দায়িত্বকে প্রাধান্য দিই – অন্যের কাজ বা ব্যর্থতা নিয়ে না ভেবে নিজের দিকটা ঠিক রাখি।
৩. সততা ও আত্মসমালোচনার চর্চা করি – নিজের ভুল-ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করে তা শুধরে ফেলার চেষ্টাই শ্রেষ্ঠ পথ।
৪. নেতিবাচক আলোচনা পরিহার করি – গুঞ্জন বা পরনিন্দা থেকে দূরে থাকি।
৫.আত্মিক প্রশান্তি গড়ি – বেশি জানার চেয়ে শান্ত থাকা ভালো।
উপসংহার
অন্যের ব্যাপারে অকারণে চিন্তা করলে নিজের সমস্যাই বাড়ে—এটি একটি কঠিন কিন্তু বাস্তব সত্য। “অনধিকার চর্চা কবা মানে নিজের কষ্ট বাড়ানো”—এই বাক্যটি যেন আমাদের জীবনের মূলমন্ত্র হয়ে ওঠে। নিজেকে জানুন, নিজের কাজ করুন—তাহলেই জীবনের পথে শান্তি ও সফলতা আপনার সঙ্গী হবে ।
Comments
Post a Comment