স্মৃতিরা মরে না

স্মৃতিরা মরে না মোঃ শাহাদৎ হোসেন পৃথিবী হলো মানুষের আসা–যাওয়ার অস্থায়ী মঞ্চ। কেউ জন্মায়, কেউ চলে যায়। সময়ের স্রোতে মানুষ হারিয়ে গেলেও তাদের রেখে যাওয়া স্মৃতি কখনও মুছে যায় না। স্মৃতিই একমাত্র অবলম্বন, যা মানুষকে অতীতের সাথে বর্তমানের সেতুবন্ধন রচনা করে দেয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষণ আমরা যেভাবে কাটাই, তা ভবিষ্যতে আমাদের চারপাশের মানুষদের জন্য স্মৃতি হয়ে থেকে যায়। কারও হাসি, কারও পরিশ্রম, কারও ভালোবাসা কিংবা কারও সৎ কর্ম – সবকিছুই একদিন গল্প হয়ে বেঁচে থাকে। তাই প্রতিটি দিন আমাদের সততার সাথে কাটানো জরুরি, কারণ আমরা চাই বা না চাই, আমাদের কাজই হয়ে ওঠে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় উপাখ্যান। অনেকেই বলেন, মৃত্যু মানেই সবকিছুর শেষ। কিন্তু বাস্তবে মৃত্যু কেবল দেহের অবসান ঘটায়, আত্মার নয়। আর স্মৃতি হলো আত্মার বহিঃপ্রকাশ। এক মায়ের আদরের ডাক, এক শিক্ষকের জ্ঞানদানের মুহূর্ত, এক বন্ধুর আত্মত্যাগ—এসব কখনো সময়ের ভাঁজে হারিয়ে যায় না। বরং এগুলো মানুষকে অনুপ্রাণিত করে সৎ পথে চলতে। মানুষের সাথে মানুষের এমন কিছু কথোপকথন বা আচরণ থাকে যা খুব ছোট বা বিনা পরিশ্রমে করা হলেও, সেটি কারও জন্য হয়ে ওঠে জীবনব্যাপী সুখস্মৃতি। আবার কারও অগোচরে—ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়—আমাদের আচরণই হয়ে উঠতে পারে বেদনাদায়ক স্মৃতি, যা সারা জীবন কষ্টের কারণ হয়ে থাকে। তাই আমাদের উচিত একটু সতর্ক থাকা, যেন আমরা অন্যের জীবনে আনন্দময় স্মৃতি যোগ করতে পারি এবং বিষাদময় স্মৃতি সৃষ্টির পথ থেকে দূরে থাকতে পারি। যদি তা করতে পারি, তবে এ পৃথিবীতেই আমরা স্বর্গের অনুভূতি পাবো। শিক্ষণীয় দিক: আমরা সবাই একদিন না একদিন বিদায় নেবো, কিন্তু আমাদের রেখে যাওয়া ভালো কাজগুলোই হবে স্থায়ী। পৃথিবী ক্ষণস্থায়ী হলেও স্মৃতি অমর, তাই প্রতিদিন যেন আমরা এমন কিছু করি, যা আগামী প্রজন্মের জন্য আলো হয়ে থাকে। সত্য, ন্যায়, ভালোবাসা ও মানবিকতা – এই চারটি গুণই আমাদের স্মৃতিকে দীর্ঘস্থায়ী ও উজ্জ্বল করে তুলতে পারে। সামান্য ভালো আচরণও কারও জীবনে অনন্ত সুখের স্মৃতি হয়ে থাকতে পারে, তাই প্রতিটি মুহূর্তে সচেতন থাকা জরুরি। অতএব, আসুন আমরা মনে রাখি—“স্মৃতিরা মরে না”, তারা কেবল সময়ের সাথে নতুন রূপে আমাদের বেঁচে থাকার প্রেরণা হয়ে থাকে।

Comments

Popular posts from this blog

আত্মবিশ্বাস ও সফলতা

মানব জনমের স্বার্থকতা