চাই একটি স্থিতিশীল ইতিহাস।

চাই স্থিতিশীল ইতিহাস । — মো: শাহাদৎ হোসেন স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে এসেও একটি জাতি যখন তার নিজস্ব ইতিহাসকে নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে, তখন তা নিছক উদ্বেগের নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য এক ভয়ঙ্কর সংকেত। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির ইতিহাস বারবার পাল্টে গেছে—এক একটি সরকার আসার সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে ইতিহাসের ভাষ্য, পাল্টেছে শিক্ষার পাঠ্যবই, পরিবর্তন হয়েছে স্মৃতিচিহ্নের নাম, এমনকি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে কিছু শব্দের উচ্চারণ; আবার পরবর্তী সরকার এসে সেই একই শব্দকে করেছে দণ্ডনীয় অপরাধ। এই চক্রটা থেমে নেই। যেন ইতিহাস নয়, ইতিহাসকে ঘিরে চলছে ক্ষমতার খেলা। আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা—যারা এই জাতির ভবিষ্যৎ, যাদের উপর ভর করে জাতির আগামী দিনের স্বপ্ন—তারা আজ দ্বিধা ও সংশয়ের মধ্যে বেড়ে উঠছে। একটি প্রজন্ম যখন একই ঘটনার দুই বিপরীত ভাষ্য পায় পাঠ্যবইয়ে, তখন তাদের মনে প্রশ্ন জাগে—আসলে সত্য কী? তারা কার কথা বিশ্বাস করবে? আর সেই বিশ্বাসহীনতা ধীরে ধীরে জন্ম দেয় অবিশ্বাস, তৈরি করে আস্থার সংকট। একটি জাতির ইতিহাস যখন স্থিতিশীল থাকে না, তখন তার ভবিষ্যৎও স্থির থাকতে পারে না। ইতিহাস কেবল অতীতকে জানার জন্য নয়—তা ভবিষ্যতের পথচলার দিকনির্দেশনা দেয়। যে জাতি নিজের ইতিহাসকে অবজ্ঞা করে, বিকৃতি ঘটায়, সে জাতি দীর্ঘ মেয়াদে উন্নত ও সংহত হতে পারে না। তাই আজ সময় এসেছে নতুন করে ভাবার। ইতিহাসের প্রশ্নে দরকার একটি সর্বজনীন, গবেষণাভিত্তিক ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ঐক্যমত। ইতিহাসকে কেবল দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখে, জাতির দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে। সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে—যদি কষ্টকরও হয় তবুও। আমরা চাই এমন এক ইতিহাস, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একই রকম থাকবে; যে ইতিহাস আমাদের বিভক্ত নয়, বরং ঐক্যবদ্ধ করবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানবে—তাদের অতীত কী ছিল, আর সেই জ্ঞানেই তারা গড়বে একটি আলোকিত আগামীকাল। আমরা চাই, স্থিতিশীল ইতিহাস।

Comments

Popular posts from this blog

আত্মবিশ্বাস ও সফলতা

মানব জনমের স্বার্থকতা